হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহঃ) বিত্তশালী পরিবারের লোক ছিলেন। একটি আজব ঘটনা তার জীবনে পরিবর্তন এনেছিল। ঘটনাটি হচ্ছে, তার বিরাট একটা আপেল বাগান ছিল। বিত্তশালী পরিবারের লোকেরা যেহেতু বিলাসী ও বিনোদনপ্রিয় হন, তাই তিনিও তেমন ছিলেন। সেসময়ে আমল ও দ্বীনের সঙ্গে তার কোনোই সম্পর্ক ছিল না। মদ আর গান-বাজনার মধ্যে ডুবে থাকতেন বেশী সময়।
একবার আপেলের মৌসুমে অবকাশ যাপনের উদ্দেশ্যে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাগানে চলে গেলেন। প্রকৃতির কোলে আশ্রয় নিয়ে তাজা ফলমূল খেয়ে আনন্দে সময় কাটাবেন এটাই অবকাশ যাপনের উদ্দেশ্য ছিল। এক পাল বন্ধু-বান্ধব জুটতেও সময় লাগল না। ফলে বন্ধু-বান্ধবের বিরাট এক কাফেলা যুক্ত হলো তার এই কাফালেয়া। রাতে গান-বাজনার আসর বসত এবং আসরে পানীয়রও আয়োজন থাকত। তিনি ছিলেন খুবই দক্ষ একজন বাদক। অত্যন্ত বিজ্ঞতার সাথে আকর্ষনীয় ঢঙে মুগ্ধকর সুরে বাদ্য বাজাতে পারতেন।
তো এক ভিন্ন জগত। এই নেশাকর জগতেই একদিন তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। কোলের মধ্যেই বাজনার সব সরঞ্জাম। ঘুম ভাঙ্গলে দেখলেন, বাদ্যযন্ত্রগুলো এখনও কোলে পড়ে আছে। সেগুলো নিয়ে দ্বিতীয়বার তিনি বাজাতে শুরু করলেন। কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, এবার এগুলো থেকে কোনো শব্দ প্রকাশ পাচ্ছে না। তিনি বাদ্যযন্ত্র মেরামতও করতে পারতেন। তাই নিজেই বাদ্যযন্ত্র মেরামতের কাজে লেগে গেলেন। যন্ত্রগুলর তার জোড়া দিয়ে পুনরায় বাজাতে গেলেন। কিন্তু এবারও আওয়াজ উঠল না। ফলে আবার মেরামত করে বাজাতে গেলেন। এবার বাদ্যযন্ত্র থেকে আওয়াজ এল বটে; কিন্তু যেশব্দ এল, তার জন্য তিনি মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না।
বাদ্যযন্ত্র হতে কুরআনের একটি আয়াত ভেসে এল—
“যারা ঈমান এনেছে, তাদের হৃদয় ভক্তিবিগলিত হওয়ার সময় কি এখনও আসেনি আল্লাহর স্মরণে এবং যে আয়াত তাদের উপর অবতীর্ণ হয়েছে তাতে? এখনও কী সেই সময় আসেনি? (সূরা হাদীদঃ ১৬)
হৃদয়কাড়া কুরআনের এ আহ্বানে বিমুগ্ধ হলেন ইবনে মুবারক। এটা ছিল আল্লাহ তা’আলার তরফ থেকে অদৃশ্য ইশারা। আল্লাহ তা’আলার ইইচ্ছা ছিল তার জীবনকে সুন্দর ও সঠিক পথে পরিচালনা করার। তাই এই আয়াত তার দিলে চট লাগল। মুহুর্তে হিসাব করে দেখলেন, তিনি তার জীবনটাকে কোথায় ব্যয় করে চলেছেন। তাই কালবিলম্ব না করে জবাব দিলেন— “হ্যাঁ হে আমার রব! আমি এখনই এসব পাপ কর্ম পরিহার করছি এবং গুনাহের ব্যস্ততা ছেড়ে দিচ্ছি এবং আল্লাহ তা’আলার প্রতি মনোনিবেশ করছি।’
তিনি কথা রাখলেন। সমস্ত পাপ ও ক্রীড়া-কৌতুক পরিহার করে মনে-প্রাণে দ্বীনের প্রতি মনোনিবেশ করলেন। পরে তিনি জগদ্বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ও মনীষীদের একজন হলেন। (মনীষী মহান ৯৪-৯৫)
0 Comments