আল্লাহ তায়ালা বেহেশেতে চোখ জুড়াবার কি আয়োজন করে রেখেছেন! তা আমরা এর কিছুই জানিনা। সেখানে খাওয়ার পর খাওয়ার চাহিদা আরো বাড়তেই থাকবে। পান করার পর নতুন করে জেগে উঠবে পানের ইচ্ছা। প্রতিদিন নিবাসের নকশা বদলে যাবে। প্রবাহিত নহর, জেগে ওঠা পানির ফোয়ারা, বয়ে চলা ঝর্ণা-সবকিছুই হবে নয়নাভিরাম। যিনি সুন্দর ময়ূর সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন চোখ জুড়ানো পর্বতমালা তিনিই সৃষ্টি করেছেন বেহেশত। সে বেহেশতের সাজসজ্জা কেমন হবে চিন্তা করা যায়!
বেহেশতী এক পুরুষ স্ত্রীর সাথে মিলিত হবে। তাকে দেখে সে বলবে, তোমার মত সুন্দরী আর কেউ নেই। আর সত্যি সত্যিই সে ভাববে—এর মত সুন্দরী বেহেশতে দ্বিতীয়জন নেই। তখন একটি আলো জ্বলে উঠবে। আলোকে অনুসরণ করে দৃষ্টি উপরের দিকে ফেরাতেই লক্ষ করবে, সেখানে আরেকজন স্ত্রী উপবিষ্ট। সে রমণী তাকে ডেকে বলবে—
আমার প্রতি তোমার কোন আগ্রহ আছে?
বেহেশতী বলবে, কে তুমি?
বলবে, তোমার অপেক্ষায় বসে আছি।
প্রথমজনকে রেখে সে তার কাছে চলে যাবে। দেখবে, এ প্রথম জনের চেয়েও অনেক বেশী রূপসী। সে তার কাছে অবস্থান করবে। মিলিত হবে। একঘেঁইয়েমি অনুভব করবে না, ক্লান্তি অনুভব করবে না। বরং ক্রমাগত তার ইচ্ছা বেড়েই চলবে। অনেকের ধারণা, বেহেশতে গিয়েও দুনিয়ার মত ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে, এই এখানকার মতই আল্লাহ আল্লাহ করতে হবে। বেহেশত তো আনন্দের স্থান। বেহেশত প্রমোদজগত। সেখানে কেবলই আমোদ।
এরপর উন্মোচিত হবে আরেকটি দরজা। তাকিয়ে দেখবে, সেখানে আরেক রূপসী অপেক্ষমান। তাদেরও একই প্রশ্ন—
আমার পালা কখন?
বেহেশতী বলবে, তুমি কে?
সে তার কাছে ছুটে যাবে। প্রত্যেক স্ত্রীই প্রথম স্ত্রীর চেয়ে অনেক বেশি রূপসী মনে হবে।
এমন সময় বিকশিত হবে আরেকটি নূর। সে নূরের বিভায় পুরো বেহেশত আলোকিত হয়ে জ্বলজ্বল করে উঠবে। উপচে পড়া আলোয় চোখ বাঁধিয়ে যাওয়ার মত বিস্মিত চোখে সে উপরের দিকে তাকাবে। তখন দেখবে, তার দুনিয়ার জীবনের ঈমানদার স্ত্রী দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে। বলছে, আমার কাছে কখন আসবে? তার সৌন্দর্য বেহেশতী হুর—রূপসী রমণীদের চেয়ে সত্তর হাজার গুণ অধিক পরিমাণ হবে।
এ হল আল্লাহর বেহেশত। আল্লাহ তায়ালা বসিয়ে দেবেন। বলবেন, বস! কাও, পান কর। চাও, যা চাও তাই দেব। যা কল্পনা করবে তাই পাবে। যতটা এর একশ গুণ অধিক দেব।
আর দুরাচারীদের বেলায় জাহান্নামে এক মেঘখন্ড ভেসে উঠবে। জাহান্নামী চিৎকার করে বলবে, হে আল্লাহ, পানি! হে আল্লাহ, পানি! তখন সে মেঘখন্ড থেকে আগুন বর্ষিত হতে থাকবে। মেঘখন্ড থেকে বর্ষিত হবে আগুন, লোহা, পাথর।
বেহেশতেও মেঘখন্ড জেগে উঠবে। সে মেঘখন্ড থেকে ঝরে পড়বে মেশক আম্বরের বৃষ্টি। এরপর মেঘখন্ড বেহেশতবাসীকে ডেকে বলবে, আমি তোমাদের সেবা করতে এসেছি। বল, কি বর্ষণ করব? শুধু পানি নয়, কেবলই মেশক আম্বর নয়; তোমরা যা কামনা করবে আমি তাই বর্ষণ করব। যে যা চাইবে, তাই বর্ষিত হবে। কিন্তু বর্ষিত হবে বেহেশতের উপযুক্ত করে।
আহমাদ ইবনে আবুল হাওয়ারী (রহঃ) এ হাদীস বর্ণনা করে বলতেন, যদি আমি এখানে পৌঁছে বলি—হে মেঘমালা! তুমি আমার প্রতি হুর বর্ষণ কর। তাহলে তাই বর্ষিত হবে। “সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্যে রয়েছে যা তোমরা ফরমায়েশ কর। (হা-মীম সিজদা : ৩১)
0 Comments