জাহেলী যুগের বাদশার ঘটনা। প্রথম দিকে তিনি মাখলুকের প্রেমে বিভোর ছিলেন। তিনি খুব ভালো কবি ছিলেন। তার চেহারা ছিল যেমন সুন্দর, তেমনি রুচিবোধও ছিল উন্নত। রাষ্ট্র পরিচালনায় তিনি দিন-রাত ডুবে থাকতেন। যখন একপর্যায়ে আল্লাহর মহব্বত তার হৃদয়ে গভীরভাবে বাসা বাঁধে, তখন ক্রমেই রাজত্ব তার কাছে তিক্ত অনুভূত হতে থাকে। এক সময় তিনি আল্লাহর মহব্বতে দেওয়ানা হয়ে রাজত্ব ছেড়ে দেন এবং জীর্ণ-শীর্ণ বেশে স্বদেশ ছেড়ে ভিনদেশে পাড়ি জমান।
তিনি পার্শ্ববর্তী তাবুক আসেন এবং নিজের চেহারা ঢেকে ফেললেন, যাতে তার কান্তিময় সৌন্দর্যপূর্ণ চেহারা দেখে কেউ বুঝতে না পারে, তিনি কোনো দেশের রাজা হবেন। প্রথম দিকে তিনি দিন-রাত শুধু আল্লাহর ইবাদাতে অতিবাহিত করেন। না খেয়েই চলতে থাকে তার দিবস-রজনী।
একপর্যায়ে অতি দুর্বল হয়ে গেলে তিনি দুমুঠো খানা জোগাতে শ্রমিকের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তবে চেহারা থাকত বরাবরই কাপড়ে ঢাকা। কিন্তু মাঝে-মধ্যে কাজের ফাঁকে বাতাসে মুখের পর্দা সরে গেলে তার সুন্দর চেহারা প্রকাশ হয়ে যেত। এতে অন্য শ্রমিকরা কানাঘুষা করতে থাকে যে, এই লোকটি হয়ত কোনো রাষ্ট্রের দূত অথবা রাজা হবেন। ক্রমে খবরটা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তাবুক রাজার কানেও খবরটি পৌঁছে গেল। তিনি এতে চিন্তিত হলেন। তিনি মনে করেন, হয়তো লোকটি এভাবে গোয়েন্দাবৃত্তিতে লিপ্ত এবং সে এভাবে রাষ্ট্রের গোপন তথ্য সংগ্রহ করে পাচার করছে।
একদিন তাবুকের বাদশা নিজেই চলে এলেন বিষয়টি তদন্ত করতে, তিনি এসে দেখলেন সেই লোকটি অন্যান্য শ্রমিকদের সঙ্গে কাজে লিপ্ত। তিনি অন্যান্য শ্রমিকদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। চেহারাবৃত লোকটিকে ডাক দিলেন এবং তার চেহারার পর্দা তুলে দিয়ে বললেন, আপনার সঠিক তথ্য আমাকে জানিয়ে বাধিত করুন। কেননা, আপনার সুদর্শন চেহারাই বলছে, আপনি অন্য যেকোন রাজ্যের বাদশা। আমি জানতে চাচ্ছি, বাদশা হয়েও আপনার এই ছদ্মবেশের হেতু কী? মোট কথা তাবুকের বাদশা তাকে বিভিন্নভাবে অনুরোধ করে তার এই গোপন বেশ ধারণের কারণ খুলে বলতে।
তাবুক বাদশা যেকোনো ভাবে রহস্য উন্মোচন করতে চান। কিন্তু শ্রমিকবেশী বাদশা দরবেশ তার পরিচয় দেওয়ার পরিবর্তে বাদশাকে একান্তে ডেকে নিয়ে তার কানে-কানে আল্লাহর মহব্বতের এমন কিছু কথা বললেন, তাতে তাবুকের বাদশাও অস্থির হয়ে উঠলেন। তার মধ্যেও আল্লাহর মহব্বত উথলে উঠল। তিনিও রাজত্ব ছুড়ে ফেললেন এবং বাদশা দরবেশের সঙ্গে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। রাত গভীর হলে দুই বাদশা স্বীয় রাজ্য ছেড়ে দূরদেশে চলে গেলেন, যাতে আল্লাহর মহব্বতে বিভোর হয়ে আল্লাহর স্মরণে কেউ তাদের ব্যাঘাত সৃষ্টি না করতে পারে। এভাবে তারা বাকি জীবন আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগীতে অতিবাহিত করলেন। (মাআরেফে মসনবী ৫৫-৫৭)
0 Comments